বসন্তকাল
বাংলা বর্ষপঞ্জির সর্বশেষ ঋতু। শীতের পর বসন্তকাল বাংলাদেশের প্রকৃতিতে রমণীয় শোভা বিস্তার করে আবির্ভূত হয়।নিচে বসন্তকালের কিছু দৃশ্য ও বিবরনঃ
পাকোর ফুল
টলি পরিবহন
বসন্তের কোকিল
ফাল্গুন ও চৈত্র মাস (ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ থেকে এপ্রিলের মধ্যভাগ পর্যন্ত) নিয়ে বসন্তকাল হলেও প্রকৃতপক্ষে শুধুমাত্র মার্চ মাসেই ঋতুটির সংক্ষিপ্ত অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এ ঋতুতে বায়ু নানা দিক থেকে প্রবাহিত হয়, কোনো নির্দিষ্ট দিকে স্থির থাকে না। শীতের উত্তুরে তথা উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তে গ্রীষ্মের দক্ষিণা অথবা দক্ষিণ-পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করার এ ক্রান্তিকালে বায়ুপ্রবাহের দুরন্তপনা শুরু হয়। বসন্তের আবহাওয়া থাকে মনোরম, আকাশে কিছু কিছু মেঘ থাকলেও সার্বিক আবহাওয়া থাকে নির্মল। কদাচিত মার্চের দ্বিতীয়ার্ধে অপরাহ্নে বিচ্ছিন্নভাবে ব্জ্রঝড় হয়ে থাকে।
এ ঋতুতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বড়ই চমৎকার হয়ে ওঠে। তরুলতাসমূহ নতুন পত্রপুষ্পে সুশোভিত হয়। রক্তবর্ণের শিমুল, পলাশ ও কৃষ্ণচূড়া এ সময়েই ফোটে। আম্রবৃক্ষসকল নব মঞ্জরীতে শোভিত হয়। বৃক্ষের অন্তরালে থেকে কোকিল সুমধুর কুহু স্বরে দিক-দিগন্ত মুখরিত করে তোলে। ভ্রমর মনের আনন্দে গুঞ্জন করতে করতে সুগন্ধি পুষ্প ও আম্র মঞ্জরীর মধু পানে মত্ত হয়। যব, গম, সরিষা ইত্যাদি শস্যে মাঠগুলি রমণীয় শোভা ধারণ করে। এ ঋতুতে হিন্দুদের বাসন্তী পূজা, দোলযাত্রা প্রভৃতি উৎসব মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ। এ সময়টি নাতিশীতোষ্ণ, তাই পরম সুখকর। মার্চ মাসে সারা দেশে গড় তাপমাত্রা ২২° থেকে ২৫° সে-এর মধ্যে উঠানামা করে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকে মাত্র ৫০ থেকে ৭০ ভাগ। এ সময় প্রভাতে ও সন্ধ্যাবেলায় ভ্রমণ স্বাস্থ্প্রদ। তবে কখনও কখনও কলেরা, বসন্ত প্রভৃতি মারাত্মক ব্যাধিরও আবির্ভাব ঘটে এ ঋতুতে।
দক্ষিণে সমুদ্র, উত্তরে হিমালয় পর্বত এবং বিশাল সমভূমির জন্য বাংলাদেশে শীত বা গ্রীষ্ম কোনোটিরই আধিক্য অনুভূত হয় না। বাংলাদেশের এ নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু প্রকৃতির কিছু ব্যতিক্রম বৈরিতা ছাড়া অত্যন্ত আরামপ্রদ। বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসাবাণিজ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি তথা সামগ্রিক জীবনধারা ষড়ঋতুর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। [রফিক আহমদ এবং সমবারু চন্দ্র মহন্ত]
নদীনালা, খালবিলসহ জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যায়। এ
ঋতুতে দিন বড় আর
রাত ছোট হয়।
এ সময় পশ্চিমা মৌসুমি
বায়ু দেশের উপর দিয়ে
বইতে শুরু করে।
আবার পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে
শীতল ও শুষ্ক বায়ুও
প্রবাহিত হয়। মহাসাগর
থেকে আগত মেঘতাড়িত বায়ুপ্রবাহের
সঙ্গে শীতল ও শুষ্ক
বায়ু মুখোমুখি পরস্পরের সংস্পর্শে এলে তা প্রবল
ঝড়ের রূপ ধারণ করে। ভিন্ন
বৈশিষ্ট্যের এ দুটি বায়ুপুঞ্জসৃষ্ট
ঝড়কে কালবৈশাখী নামে
আখ্যায়িত করা হয় যার
ধ্বংসাত্মক রূপ এ ভূখন্ডের
অধিবাসীদের কাছে অতি পরিচিত।
গ্রীষ্ম দিয়েই শুরু হয়
বাংলা বর্ষ। গ্রীষ্মের প্রথম
দিন পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের-এর
প্রথম দিন হিসেবে উদযাপিত
হয়। এ ঋতুতে হিন্দুরা
জামাইষষ্ঠীসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
গ্রীষ্মকাল ফলের ঋতু। আম, জাম,
জামরুল, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, লিচু,
তরমুজ, আমড়া প্রভৃতি সুস্বাদু
ফল এ ঋতুতেই জন্মে।
গোলাপ, বকুল, বেলি, টগর,
জবা প্রভৃতি সুগন্ধি ফুলও এ সময়ে
ফোটে।