Wednesday 18 January 2017

হেমন্তকালের রুপ ও বিবরন shape and details of the autumn season


হেমন্তকাল  বাংলা বর্ষের চতুর্থ ঋতু। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে এর ব্যাপ্তিকাল কার্তিক অগ্রহায়ণ (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) মাস জুড়ে।নিচে হেমন্তকালের কিছু দৃশ্য ও বিবরন  দেওয়া হলঃ
natural image
ধান বাধার দৃশ্য


natural image
ধান টানার দৃশ্য

natural flower
শিউলী ফুল

শীতের পূর্বসূরি হেমন্ত হচ্ছে পাকা ধানের ঋতু। এসময় ঘরে ঘরে নতুন ধানের পিঠা খাওয়ার উৎসব শুরু হয়, ভোররাতে বাড়ি বাড়ি ঢেঁকিতে চিঁড়ে কোটার শব্দ ওঠে। তবে এ চিত্র সম্পূর্ণ গ্রামবাংলার। অথচ আজকাল বিশ্বব্যাপী যে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা, তার রেশ এসে পড়েছে বাংলার গ্রামেও। ষড়ঋতুর বিচিত্র বিকাশ আজ এই ভাটি বাংলার হৃদয় হতে মুছে যেতে বসেছেবিশ্বপ্রকৃতির দিকে তাকালে দেখতে পাই সেখানে ভৌগোলিক পরিবেশের কারণেই নানা রূপের অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ। একটু উপলব্ধি করলে বোঝা যায় দুর্গম হিমালয় অঞ্চলে প্রকৃতি তার অসীম সৌন্দর্যরাশি যেভাবে ছড়িয়ে দেয়, বাংলাদেশে সেই প্রকৃতিই আবার ভিন্নভাবে নিজেকে উপস্থাপিত করে। তবে এর মূলে কেবল আবহাওয়াগত কারণই বিদ্যমান নয়, এক্ষেত্রে ষড়ঋতুর প্রভাবকে অস্বীকারের উপায় নেই। ষড়ঋতু মানে ছয় ঋতু। আর সেখানে কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্তকাল।

হেমন্তের সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত হতে দেখি বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। বাংলার জনপদ মুখরিত হয় হেমন্তের পাকা ধানে। কনকনে শীতের আগমনী বার্তা ঘোষণা করে হেমন্তের হিমবাতাস। আবার উড়ে যায় পীত পাতা, ঝরা পাতা কোন দুঃখের শ্লোক রচনা করে? মনে পড়ে ‘হৈম’র কথা। দিগ¦লয়ে হেমন্তর নরোম ধূসরতা মানব-মনের না জানা শূন্যতার কথা বলে! এ কথা মানতে হবে যে, প্রকৃতির স্বভাব-চরিত্রকে বিচিত্রগামী করে তুলেছে বাংলার ষড়ঋতু। আর এ ষড়ঋতু বিশ্বপ্রকৃতিতে পুবের এই ভাটি অঞ্চলের বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্নভাবে বহুবিচিত্র রূপের ছটায় উদ্ভাসিত হয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির ধারায় একদিকে যেমন রয়েছে এই বঙ্গীয় বদ্বীপের মানুষ ও তার জীবনধারা, প্রচলিত রীতিনীতি, আচার-প্রথা; আবার তেমনি রয়েছে এ জনপদের শিকড় হতে উত্থিত সঙ্গীত, সাহিত্য, চিত্রকলা, যা বেড়ে উঠেছে এতদাঞ্চলের জলহাওয়া, মাটি-মানুষ ও নিসর্গ থেকে। আর এক্ষেত্রে বাংলার ষড়ঋতু সেই ঐতিহ্যকে করেছে সমৃদ্ধ।

শরতের কাঁচা হলুদের মতো সোনলি রোদ দিগন্তব্যাপী ছড়িয়ে দেয় চিরায়ত রূপের সুধা আর সৌন্দর্য। তাকে অনুসরণ করে হেমন্ত ঋতুর আবির্ভাব ঘটে ধীর পদসঞ্চারণে। প্রকৃতির হরিদ্রাভ সাজ দিকে দিকে নতুনের জাগরণ ঘোষণা করে। বর্ষার জল সরে গিয়ে মাঠঘাট মাটির সোঁদা গন্ধে ভরে ওঠে। শীতের পূর্বসূরি হেমন্ত হচ্ছে পাকা ধানের ঋতু। এসময় ঘরে ঘরে নতুন ধানের পিঠা খাওয়ার উৎসব শুরু হয়, ভোররাতে বাড়ি বাড়ি ঢেঁকিতে চিঁড়ে কোটার শব্দ ওঠে। তবে এ চিত্র সম্পূর্ণ গ্রামবাংলার। অথচ আজকাল বিশ্বব্যাপী যে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা, তার রেশ এসে পড়েছে বাংলার গ্রামেও। ষড়ঋতুর বিচিত্র বিকাশ আজ এই ভাটি বাংলার হৃদয় হতে মুছে যেতে বসেছে। তথাপি শীতের প্রাক্কালে হিমঋতু হেমন্তের পাতা ঝরার দৃশ্যের ভেতরে যে শূন্যতা ধরা পড়ে, তা আরো বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে আমাদের শিল্পসাহিত্যে।

চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের প্রধান কবি কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। দেশজ আচার ও লোকসংস্কৃতির সাথে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও এর সঙ্গে মানব-সম্বন্ধের যে অকৃত্রিম প্রকাশ মুকুন্দরামের কাব্যে লক্ষ করা যায়, বাংলা সাহিত্যে তা বিরল। কবিকঙ্কণ বাংলাদেশের মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে প্রভাব-সঞ্চারী এ দেশের ষড়ঋতুর বিকাশ বৈচিত্র্যকে চমৎকার কাব্যরূপ দিয়েছেন। তাঁর ষড়ঋতুর এই ব্যঞ্জনায় শুধু হেমন্ত সম্পর্কে বলেন, ‘নিকেতন পরাণনাথ কৈলে বসবাস/আইল কার্ত্তিক মাস হিমের প্রকাশ’। আবার এ বাংলার প্রবাদ-প্রবচনও এই ষড়ঋতু কেন্দ্রিক কৃষির সাথে সম্পর্কযুক্ত। খনার বচন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তেমনি কার্তিকে কৃষি পণ্য কলার চাষ নিয়ে একটি চমকপ্রদ চাকমা প্রবাদ রয়েছে, ‘কাতির কলা আহ্্ তিয়্যে থেলি ন পারে’। অর্থাৎ কার্তিকে অধি উৎপন্ন কলাগাছের ঝাড় হাতিও ঠেলতে পারে না। বাংলাদেশের চিরায়ত ঋতুর এই চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্যগুলো আবহমানকালের প্রকৃতিকে মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণ, শুভাশুভ নির্ধারণে দিকনির্দেশনা দেয়।

No comments:

Post a Comment

Comments system

Disqus Shortname